
ঢাকাঃ দেশের আনাচে-কানাচে গজিয়ে উঠেছে হাজারে অনিবন্ধিত ভুয়া ক্লিনিক-হাসপাতাল। এসব অবৈধ ক্লিনিকে ভুয়া চিকিৎসক, অনভিজ্ঞ নার্স, অদক্ষ আয়া দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে অধিকাংশ হাসপাতালে প্রতিদিনই ঘটছে নানা অঘটন। ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রোগীদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে প্রায়ই। অনেক প্রতিষ্ঠানের তথ্যও নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে। তবে তারা জানিয়েছে, দেশজুড়ে ৩ হাজারের বেশি অবৈধ-নিবন্ধনহীন হাসপাতাল রয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগেরই নাম ও অবস্থান জানে না অধিদফতর। অভিযোগ রয়েছে অনলাইনে আবেদনের পর স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টোকেন, সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন ক্লিনিক মালিকরা।
এসব অবৈধ-নিবন্ধনহীন ক্লিনিক-হাসপাতাল বন্ধে নানা সময়ে অভিযান পরিচালিত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোর দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে এবার এসব বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ, অনুমোদনহীন ক্লিনিকগুলো বন্ধের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ সময়ের মধ্যে ক্লিনিক বন্ধ করা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। তবে তা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা।
বেসরকারী এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক নিয়ে অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। অনভিজ্ঞ চিকিৎসক, দাইয়ের মাধ্যমে প্রসব, বিল পরিশোধের অনাদায়ে লাশ আটকে রাখাসহ ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে এসব ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। এমনই একটি বেসরকারী অনুমোদনহীন হাসপাতালে মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে গত বুধবার। এদিন রাতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মা ক্লিনিক এ্যান্ড হাসপাতালে প্রচ- প্রসব বেদনা নিয়ে ভর্তি হন ৩০ বছর বয়সী লাইলী বেগম। উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ী গ্রামের আতোয়ার হোসেনের স্ত্রী লাইলীর প্রসব ব্যথা উঠলে প্রথমে তাকে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই নেয়া হয়। কিন্তু রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা তাকে টাঙ্গাইল নিয়ে যেতে বলেন। এমন সময় এক দালালের খপ্পরে পরে তাকে পার্শ্ববর্তী মা ক্লিনিক এ্যান্ড হাসপাতালে নেয়া হয়। ওখানে অস্ত্রোপচারের সময় মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়। লাইলী বেগমের স্বামী আতোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, টাঙ্গাইল নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি আনতে গেলে ক্লিনিকের দালালরা এসে আমার স্ত্রীকে মা ক্লিনিক এ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অপারেশন থিয়েটারে রাখে। পরে আমার স্ত্রী মারা গেলে তাকে টাঙ্গাইল নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ডাক্তার, নার্স ও ক্লিনিকের মালিকরা পালিয়ে যায়। ভুয়া এই হাসপাতালে আনার জন্যই আমার স্ত্রী ও নবজাতক মারা গেল।
একইভাবে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া যায় মানিকগঞ্জেও। মানিকগঞ্জের সিংগাইরের সিটি হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু হয়। পরে অনুমোদনহীন ওই হাসপাতালটিকে সিলগালা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাম্মা লাবিয়া অর্ণব। একই ঘটনায় কারাদ- দেয়া হয় ৭ জনকে।
এমনই একটি অনুমোদনহীন হাসপাতালে বকেয়া বিল দিতে না পারায় রোগীর স্বজনকে হাসপাতালে আটকে রাখারও অভিযোগ রয়েছে। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার অনুমোদনহীন ইউনিক হাসপাতাল (প্রাঃ) লি. রিক্সাচালক শফিকের স্ত্রীকে ৩ দিন ধরে আটকে রাখা হয়। ভুক্তভোগীর রোগী নাসিমা আক্তার পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৈরভাঙ্গা গ্রামের রিক্সাচালক শফিকের স্ত্রী। রোগীর স্বামী রিক্সাচালক মোঃ শফিক অভিযোগ করেন, প্রায় দুই বছর আগে তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার পা পিছলে পায়ে আঘাত পান। তাকে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য চকরিয়া পৌর শহরের জনতা মার্কেট এলাকার ইউনিক হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতালের অর্থোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা তার পায়ে অপারেশন করেন। ওই সময় তার কাছ থেকে চিকিৎসা ও সিট ভাড়াসহ প্রায় ৭০ হাজার টাকা বিল আদায় করে। অপারেশনের কয়েকদিন পর নাসিমা ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করে বাড়ি ফিরে যান। পরে কয়েকদিন আগে নাসিমা আক্তারকে আবারও ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থ হলে তাকে ছাড়পত্রও দেয়া হয়। এ সময় চিকিৎকরা তার কাছ থেকে চিকিৎসা বাবদ ১৮ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু গরিব রিক্সাচালক হওয়ায় ওই টাকা দিতে না পারায় ৩ দিন ধরে তার স্ত্রীকে হাসপাতালে আটকে রাখা হয়। হাসপাতালে দায়িত্বরত অর্থোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. মহিউদ্দিন তাদের দাবিকৃত পুরো টাকা না পেয়ে রোগীকে হাসপাতালেই আটকে রেখে দেন বলে অভিযোগ করেন শফিক।
দেশজুড়ে বেসরকারী অনুমোদনহীন হাসপাতাল-গুলোতে এমন উদাহরণ অসংখ্য। বিনা চিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসায় এসব হাসপাতালে রোগী মৃত্যু যেনো স্বাভাবিক বিষয়। আর উচ্চ হারে বিল আদায়ের ঘটনা তো রয়েছেই।
শুধু টাঙ্গাইল, কক্সবাজার বা মানিকগঞ্জ নয় সারাদেশেই এমন অসংখ্য অবৈধ অনুমোদনহীন বেসরকারী হাসপাতাল রয়েছে ব্যাঙের ছাতার মতো। জনকণ্ঠের প্রতিনিধিদের প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, সিলেট বিভাগে চিকিৎসার নামে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া অনুমোদনহীন ক্লিনিক রয়েছে প্রায় ১৫টি। এসব ক্লিনিকের অধিকাংশই লাইসেন্স ছাড়াই চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ লাইসেন্স নবায়ন না করা অবৈধ হয়ে আছেন। একই অবস্থা হবিগঞ্জেরও। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এ জেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে হাসপাতাল ও ক্লিনিক। অভিযোগ পাওয়া গেছে, জেলার ৯৭টি বেসরকারী হাসপাতালের মধ্যে ২৭টিই অবৈধ অনুমোদনহীন। সুনামগঞ্জ শহরে অন্তত ৩০টি বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই অবৈধ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
একই অবস্থা দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও। করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে ২০২০ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জানা যায়, খুলনা বিভাগের অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন নেই। অনলাইনে নিবন্ধনের নামমাত্র আবেদন করেই চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। অধিদফতরের সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগও রয়েছে নিবন্ধনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। খুলনা জেলায় বর্তমানে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে ৫ শতাধিক। এর মধ্যে নিবন্ধিত হাসপাতাল ১১০টি। খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে, শুধু মহানগরীতেই ৭৮টি ক্লিনিক ও ৮২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন আছে। এই অঞ্চলের নড়াইল, যশোরসহ সব এলাকার চিত্র প্রায় একই।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উত্তরবঙ্গেরও একই দৃশ্য দেখা যায়। রাজশাহী বিভাগে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে থাকা তথ্য অনুযায়ী এ শহরে ক্লিনিক আছে ৯৬০টি। তবে বাস্তব চিত্র একেবারে ভিন্ন। অর্ধেকের বেশি ক্লিনিকের রেজিস্ট্রেশনের নবায়ন নেই। সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে ক্লিনিকগুলোকে রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় শহর রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকাটি ক্লিনিকপাড়া হিসেবে পরিচিত। শুধু যেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদিত বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে ৫৩টি ও ডায়াগনস্টিক আছে ১১৬টি। তবে এর অধিকাংশই নানা অনিয়মে পরিচালিত হচ্ছে। এর বাইরে আছে বেশকিছু অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। রাজশাহী বিভাগে মোট ৯৬০টি বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল আছে। যার মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৫৭টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯৭টি, বগুড়ায় ২৪৭টি, সিরাজগঞ্জে ১০৭টি, পাবনায় ১১০টি, জয়পুরহাটে ২১টি, নাটোরে ১১৫টি ও নওগাঁয় ১০৬টি। এ ছাড়া লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামরী, গাইবান্ধা, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি ক্লিনিক রয়েছে। অনলাইনে আবেদনের পর স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টোকেন, সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন ক্লিনিক মালিকরা।
চট্টগ্রামে বেসরকারী হাসপাতালগুলোতেও চলছে অনিয়ম। তবে এসব অভিযোগের কোন প্রতিকার নেই। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলেও এর প্রতিকার পাওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। অভিযোগ আছে, লাইসেন্স নবায়ন না করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, নিয়মবহির্ভূতভাবে শয্যা রাখা, কিছু প্রতিষ্ঠানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সের নিয়োগপত্র না থাকা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তালিকা, ক্লিনার নিয়োগের তথ্য না থাকা, রোগ নির্ণয়ের মূল্য তালিকা দৃশ্যমান করে না রাখা, রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক-প্যাথলজিস্ট, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের তথ্য না থাকা, হাসপাতালে কোন ব্লাড ব্যাংক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য না থাকাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগে মোট ৪৩৯টি বেসরকারী হাসপাতাল আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলায় হাসপাতাল আছে ১৪৪টি ও ডায়াগনস্টিক কেন্দ্র আছে ১৭৩টি, কক্সবাজারে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক কেন্দ্র আছে ৮৯টি, খাগড়াছড়িতে আছে ৩৯টি, লক্ষ্মীপুরে আছে ৭৭টি, নোয়াখালীতে আছে ৭২টি ও রাঙ্গামাটিতে আছে ১৮টি। তবে অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোন তালিকা নেই।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলাতেও যত্রতত্র গড়ে উঠেছে বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনায় সরকারী হিসাবে এই সংখ্যা প্রায় ২৩০টি। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স হালনাগাদ হলেও বাকিরা এখনও নবায়ন করেননি। আর সনদবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিকের কোন হিসাব নেই। সূত্র মতে, সনদবিহীন এবং মানহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের সংখ্যা চার শতাধিক। এর মধ্যে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহেই রয়েছে দেড় শতাধিক।
একই অবস্থা শেরপুর জেলায়ও। জেলায় ২২টি বেসরকারী ক্লিনিক ও ৮১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। জামালপুরে সরকার অনুমোদিত বেসরকারী ক্লিনিকের সংখ্যা ১৮টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পাঁচটি। এর বাইরে শুধু জেলা শহরেই রয়েছে অর্ধশতাধিক অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক। নেত্রকোনায় সরকারী হিসাবে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ১০টি। তবে পিছিয়ে নেই অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোও। এই জেলায়ও অর্ধশতাধিক অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে, যে গুলোর অনুমোদন নেই।
বরিশালেও দিন দিন বাড়ছে হাসপাতাল, ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার। শুধু বরিশাল নগরী না বিভাগের প্রতিটি জেলা-উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাব। এদের বেশিরভাগেরই যথাযথ অনুমোদন নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের কোন সঠিক তথ্যও নেই। কোন তদারকিও নেই। প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্ট-টেকনিশিয়ান এবং রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তার ছাড়াই পরীক্ষা-নিরীক্ষার রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার, আয়া, বুয়ারা কমিশনের মাধ্যমে এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠান। এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা এবং চিকিৎসার নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকা।
তবে এবার থেকে এসব অনুমোদনহীন হাসপাতাল আর কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে না আশ্বস্ত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ আহমেদুল কবির। তার নির্দেশিত বিজ্ঞপ্তিকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, আমাদের বিজ্ঞপ্তিতে মোট চারটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করতে হবে অবশ্যই। অনিবন্ধিত বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে এ কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে আমরা হুঁশিয়ারি দিয়েছি। এ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়াও যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করলেও নবায়ন করেননি, তাদের নিবন্ধন নবায়নের জন্য সময়সীমা প্রদান করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নবায়ন গ্রহণ না করলে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে অপারেশনের সময় এনেস্থেসিয়া প্রদান ও ওটি এ্যাসিস্ট করার ক্ষেত্রে নিবন্ধিত চিকিৎসক ছাড়া অন্যদের রাখা হলে সেসব প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন নিবন্ধনের আবেদন করেছেন, তাদের লাইসেন্স প্রদানের কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্তির আগে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাতে পারবে না।
তিনি বলেন, এটি আমরা সব সময়ই করে থাকি। কিন্তু এখনকার যে বাস্তবিক অবস্থা তৈরি হয়েছে এক্ষেত্রে কঠোর না হয়ে উপায় নেই। অনুমোদনহীন এসব ক্লিনিক-হাসপাতালের বিরুদ্ধে কি রকম আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের কাছে বিচারিক ক্ষমতা নেই সেহেতু আমরা এসব হাসপাতাল পাওয়া মাত্রই বন্ধ করে দেব। তবে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশ কয়েক বছর যাবত সরকার এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়। এর আগে ২০২০ সালে বেসরকারী ক্লিনিক হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন বা আবেদন করতে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে জমা পড়ে ১৪ হাজারের মতো আবেদন। কথা ছিল যারা আবেদন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। কিন্তু তা খুব একটা দৃশ্যমান হয়নি। আবার যেসব আবেদন জমা পড়েছে, তাদের মধ্যে হালনাগাদ লাইসেন্স ছিল মাত্র ৫ হাজার ৫১৯টির। যাচাই-বাছাই ও পরিদর্শনের অপেক্ষায় তখন রাখা হয় হাজার ৪১টি। অসম্পূর্ণ আবেদনপত্র পাওয়া যায় তিন হাজার ৩০৪টি। এগুলোর কোনটির ট্রেড লাইসেন্স নেই, কোনটির পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। আবার কোনটির ছিল অন্যান্য ত্রুটি। ফলে আইন অনুযায়ী এদেরও নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ ছিল
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর পর্যন্ত সারাদেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মোট ৬ হাজার ৬৭টি বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতাল ২ হাজার ১৩০টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৩ হাজার ৮৫৬টি ও ব্লাড ব্যাংক ৮১টি।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরেরর পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) ডাঃ বেলাল হোসেন বলেন, অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অনিবন্ধিত সব ক্লিনিক বন্ধ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে অনিবন্ধিত ক্লিনিক বন্ধ না করলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
এসব অনুমোদনহীন হাসপাতাল মানুষের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে হঠাৎ হঠাৎ নয় বরং নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমরা প্রায় সময়ই শুনি শুধু অনুমোদনের জন্য অনলাইনে আবেদন করে, আবার কোন প্রতিষ্ঠান কোন কিছু না করেই বহালতবিয়তে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব হাসপাতালে চিকিৎসার নামে ব্যবসা, প্রতারণা, রোগী ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া যায় হরহামেশাই। রমরমা ব্যবসার কারণে রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে উপজেলাগুলোতেও এখন রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। তাই এসব বন্ধ করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে স্বাস্থ্য বিভাগকেই।
সাভারে ২ হাসপাতাল সিলগালা ॥ নিবন্ধনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় সাভারে দুটি হাসপাতাল সিলগালা করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। বৃহস্পতিবার সাভারের বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সায়েমুল হুদা।
তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী এদিন দুপুরে সাভারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় নিবন্ধনের কাগজ দেখাতে না পারায় জেনারেল হাসপাতাল ও নিউ মুক্তি ক্লিনিক নামে দুই হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছে।
আমাদের বাণী/২৭/৫/২০২২/বিকম
Leave a Reply