
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের টুঙ্গিবাড়িয়া গ্রামে ছোট্ট একটি তালপাতার ঝুপড়ি ঘর। বৃষ্টি-বর্ষা উপেক্ষা করে বসবাস করেন ৭২ বছরের অশীতিপর বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম। জীবনযুদ্ধে বড্ড ক্লান্ত মনোয়ারা এখন মৃত্যুতেই যেন সুখের ছোঁয়া খুঁজে চলেছেন।
প্রায় ৩০ (ত্রিশ) বছর আগে স্বামী সামছু বয়াতীকে হারিয়েছেন মনোয়ারা। টানাপোড়েনের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মনোয়ারা। নির্মম বাস্তবতার সাথে পার করে এসেছেন জীবনের আরও ৩০ (ত্রিশ)টি বসন্ত।
মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে ফরিদাকে নিয়েই মনোয়ারার সংসার। একমাত্র ছেলে নাসির বউ নিয়ে থাকেন শ্বশুর বাড়িতে। ভরণপোষণ তো দূরের কথা খোঁজ’ই নেন না বৃদ্ধা মায়ের। মানুষের ঘরে কাজ করে, আর মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে যে খাবার আসে তা দিয়েই খেয়ে-না খেয়ে দিন পার করছেন মনোয়ারা।
বেড়িবাঁধের পাশে অন্যের দেওয়া জায়গায় তালপাতার খুপড়ি ঘরেই বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে পুড়ে বসবাস মনোয়ারার। জরাজীর্ণ ঘরের ছোট্ট মেঝেতে থাকা-খাওয়া ও রান্না। দীর্ঘদিন মানুষের বাড়ি-বাড়ি আশ্রয় নিলেও, এখন আর কেউ থাকতে দেয়না পাগল মেয়ের জন্য মনোয়ারা বেগমকে।
কেঁদে কেঁদে মনোয়ারা বেগম বলেন, বাবা দুই বেলায় পানি ছাড়া কিছুই খায়নি এই পাগল মাইয়াডারে লইয়া (মেয়েটারে নিয়ে)। এখন মরতে পারলেই বাচিঁ আর কষ্ট সহ্য হয়না। কিন্তু মরার আগে যদি পাগল মাইয়াডারে (মেয়েটারে) একটা ঘর দিয়ে যাইতে পারতাম তাহলে মরেও শান্তি পাইতাম। হুনছি (শুনছি) সরকার ঘর দেয় তাই মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে অনেকবার গেছি কিন্তু ৩০ (ত্রিশ) হাজার টাকা দিতে পারিনি বলে ঘর পায়নি।
উল্লেখ্য, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সরকারের মহৎ উদ্যোগে রাঙ্গাবালী উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ১৮৮৫টি ঘর দিলেও সেখানে ঠাঁই মেলেনি এই অসহায় বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের। প্রবাদ আছে অভাগা যেদিকে চায় সাগরও শুকিয়ে যায়, হয়তোবা মনোয়ারার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়।
বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুম মিয়া বলেন, যদি বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নে কেউ সরকারি ঘর পায় তাহলে প্রথমেই মনোয়ারা বেগমের পাওয়া উচিৎ ছিল কিন্তু অদৃশ্য কারণে তিনি পায়নি। বয়স্ক ভাতা ছাড়া, সরকারের দেয়া আর কোনো সহায়তা পান না অসহায় মনোয়ারা বেগম।
প্রতিবেশি মাহফুজ মিয়া বলেন, আজকেও তিনি আমাদের ঘরে খাবার চাইতে আসছিল, কিন্তু খাবার ছিলনা বিধায় দিতে পারিনি। প্রায় সময়ই তাকে সহযোগিতা করি।
এ বিষয়ে বড়বাইশদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বলেন, বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের সাথে আমার পরিচয় করোনাকালিন সময় থেকে। আমি তার সকল তথ্য সংগ্রহ করে তার পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করছি এবং আমার সাধ্যমতো তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, আমার নির্বাচনের আগে বৃদ্ধা মনোয়ারা আমাকেই বলেছেন, মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে গেছে কিন্তু টাকা দিতে পারেনি বলে ঘর পায়নি, আসলে এটি দুঃখজনক বিষয়। আমার জানামতে তিনি বয়স্ক ভাতা ছাড়া, সরকারের দেওয়া আর কোনো সহায়তা পায়না। ইনশাআল্লাহ এখন থেকে সে সরকারের দেয়া সকল সুযোগ-সুবিধা পাবেন এবং এবার ভূমিহীন ও গৃহহীনের তালিকায় তিন নাম্বারে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান বলেন, তার বিষয়ে কোনো তথ্য আমার জানা নেই। আপনি ওনার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি এবং তার ঘরের ছবি দেন আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
আমাদের বাণী/২৬/৫/২০২২/বিকম
Leave a Reply