ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, কারাগারে ৯

ঢাকাঃ ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় সিংগাইর সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ৯ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপন দেবনাথের উপস্থিতিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামমা লাবিবা অর্নব বুধবার (২৫ মে) অভিযান শেষে দুপুর ১২টার দিকে এ রায় দেন। এদের মধ্যে দুইজনকে একমাস এবং ৭ জনকে ১৫ দিনের সাজা দেওয়া হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৫ জন নারী এবং ৪ জন পুরুষ রয়েছেন। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে থানার ওসি সফিকুল ইসলাম মোল্যা জানিয়েছেন। তবে মোবাইল কোর্ট চলাকালীন সময়ে ওই ক্লিনিকের মালিক নজরুল ইসলাম স্বপন পালিয়ে যাওয়াতে তার স্ত্রীকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় বলেও তিনি জানান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় রবিবার রাতেই পৌরসভার মেয়রের বাড়িতে সালিশ বসলে মেয়র আবু নাঈম মো. বাশার ওই হাসপাতালের মালিককে দুই লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেন। তবে এ ঘটনায় গত সোমবার ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিমও গঠন করা হয়েছে। তদন্তে কমিটি জানতে পারেন সরকারি কাগজে ওই হাসপাতালের কোনো অস্তিত্ব নেই।

নিহত প্রসূতি সাবিনা উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের টাকিমারা গ্রামের মোখলেছ মিয়ার স্ত্রী এবং উত্তর বাহাদিয়ার সকেল উদ্দিনের মেয়ে। স্বজনদের অভিযোগ সাবিনা আক্তারের প্রসব যন্ত্রণা উঠলে শনিবার রাত ১১টার দিকে সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে স্বাভাবিকভাবে প্রসব না হওয়াতে হাসপাতালের গাইনী ডা. ইমা বিনতে ইউনুছ তার অস্ত্রপচার করেন। এতে তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। অস্ত্রপচারের পর তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। চিকিৎসকের ভুল অস্ত্রপচারের কারণে অধিক রক্তক্ষরণে অপারেশন থিয়েটারেই তার মৃত্যু হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুজহাত নওরীন আমীন মোবাইল কোর্ট চলাকালীন সময়ে বলেন, ‘ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তাদের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের কাজ শুরু করেছি। তবে রিপোর্ট এখনো জমা দেওয়া হয়নি। তদন্তে সিটি হাসপাতালের মালিক নজরুল ইসলাম স্বপন তার প্রতিষ্ঠানের বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া, তার হাসপাতালে সব কিছুতেই অনিয়ম রয়েছে। আবার দেখা গেছে নিজেরাই ছাদের ওপর কারখানা তৈরি করে নিজেরাই গজ ব্যান্ডেজও স্যানেটারি ন্যাপকিন তৈরি করছে হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য। ন্যাপকিনের গায়ে মেয়াদ উত্তীর্ণেরও কোনো তারিখ নেই। এ ছাড়া, অপারেশ থিয়েটার এবং ল্যাবের অবস্থা একেবারেই নোংরা। কী করে এত দিন ধরে সে এগুলো করছে।

একই কথা বললেন তদন্ত টিমের সদস্য সচিব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. ফারহানা নবী।

এদিকে গ্রেফতারকৃত ওই হাসপাতালের কর্মচারীরা বলেন, ‘অন্যায় করলে হাসপাতালের মালিক করেছে। আমরা অল্প বেতনের কর্মচারী। আমাদের কেন সাজা ভোগ করতে হবে।’

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.