
ফরিদপুরঃ জেলার হোটেল-রেস্তরাঁয় অবাধে বিক্রি হচ্ছে বাসি-পচা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ রাখা খাবার। যা খেয়ে পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এজন্য বিভিন্ন সময় এসব হোটেল-রেস্তরাঁকে জেল-জরিমানা করা হলেও অনিয়ম বন্ধ হচ্ছে না।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ বলছে, দ্রæতই ফরিদপুরের হোটেল-রেস্তরাঁ গুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে। ফরিদপুর শহর জুড়ে গড়ে উঠেছে বহু হোটেল-রেস্তরাঁ। যেগুলোতে প্রতিদিন খাবার খাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু কি খাচ্ছেন তারা?
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের নীলটুলী এলাকায় নিউ ধান সিঁড়ি হোটেল এবং রেস্তরাঁয় টয়লেট ও ময়লার ভাগারের পাশে রান্নাঘরে চলছে রান্নাবান্না। আর ওই খাবারের ওপর মাছি উড়ে এসে বসছে। সাথে আছে মুখ খোলা বস্তাভরা ময়দা ও মাখা ময়দার উপরে পিপড়া মাছি রাজত্ব করছে।শিঙ্গাড়া-সমুচা ভাজা হচ্ছে অনেকদিনের পোড়া তেলে।
এবিষয়ে দোকানটির পরিচালক জাহিদুল ইসলামের কাছে প্রশ্ন করা হলে দোকানে পরিবেশ ও খাবার খেয়ে মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরতে পারেন কি’না? তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে আপনার কাছে কিছু বলতে চাই না।
অন্যদিকে শহরের নিউ মার্কেট এলাকার মোহম্মাদীয়া রেস্তরাঁর চিত্র আরো ভয়াবহ তারা নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের কোন নিদর্শনাই মানছেন না, তাদের হোটেলে কোন কিচেন নেই এবং যেখানে খাবার পরিবেশন করছে সেখানে পরিবেশ অপরিষ্কার ও মশা মাছির উৎপাত লক্ষণীয়।হোটেল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দ‚রে তাদের কিচেন যা স্পষ্ট ভাবে নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের আইন অমান্য করা হচ্ছে।
মাঝারি মানের এসব হোটেলে খেতে আসা একজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় আমাদের। তিনি বলেন, আমরা যারা ব্যাচলর বা ছোট চাকরি করি, তাদের ভরসা হলো এসব মাঝারি ধরনের খাবারের দোকান। শুধু স্বাস্থ্যসম্মত হলেই তো চলবে না, দামের কথাও মাথায় রাখতে হয়। তাই নিরুপায় হয়ে এসব হোটেলই শেষ ভরসা।তবে ওয়েটারদের ব্যবহার বিব্রতকর, খাবার পরিবেশন থেকে খাবার টেবিল পরিষ্কার করা তাদের দায়িত্ব কিন্তু তারা ভোক্তাকে আসলে কি মনে করে তা আমরা জানি না।
ফরিদপুর ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী ফারজানা জাকির তিন্নি প্রায় তার বাইরের রেস্টুরেন্ট বা হোটেলে খেতে হয় জীবনের প্রয়োজনে। তার মতে, গত রোজায় মানুষ বেশির ভাগ হোটেল রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়েছে কিন্তু ফরিদপুরের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট গুলো খাবার তৈরির যে নিরাপদ পদ্ধতি ও সঠিক সংরক্ষণ তা গ্রহণ করা হয় না বলেই আজ স্বাস্থ্য ঝুঁকি তে পরছে মানুষ।
ফরিদপুরের জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বজলুর রশিদ খান বলেন, সব হোটেল-রেস্তরাঁকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে। শিগগিরি পুরো জেলার হোটেলের খাবারের মান নিয়ে কাজ শুরু করা হবে। প্রথম একটা জোনকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ধরা হয়েছে। সেই কাজ শেষ হলে পুরো জেলার রেস্টুরেন্টগুলোর ওপর জরিপ করা হবে। এরপর আমরা হোটেলের মানের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন গ্রেটিং স্টিকার লাগিয়ে দেব। শুধুমাত্র নিরাপদ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানিও এর অভাবে ফরিদপুরে গত এপ্রিলেই ডায়রিয়ায় প্রকোপে আক্রান্ত হয়েছে বহুলোক এবং রেকর্ড ২৪ ঘণ্টায় নতুন ১১৩ জন করে আক্রান্ত হয়েছে এবং দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। শয্যা বাড়িয়েও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা গণেশ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘ফরিদপুরে হঠাৎ করে ডায়রিয়ার আক্রান্তর হার বেড়ে গেছে। এ সময় বিশেষত গরমের কারণে ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে ডায়রিয়ার আক্রান্ত হচ্ছে।’তিনি বলেন, ‘বেশি করে পানি পান করলে এবং ভাজা-পোড়া খাবার ও বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে গেলে ডায়রিয়া থেকে দ‚রে থাকা সম্ভব হবে।’
আমাদের বাণী/২৪/৫/২০২২/ডিএ
Leave a Reply