মণিরামপুরে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি

ধর্ষণ

যশোরঃ জেলার মনিরামপুরে কোচিং সেন্টারে ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষক প্রদীপ পাইনকে এক মাসের জন্য সাময়িক বহিষ্কার ও তার পরিচালিত কোচিং সেন্টার “দি-সাগর কোচিং ” সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষককে হেফাজতে নিয়েছে র‍্যাব-৬ যশোরের সদস্যরা।
শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত শিক্ষক প্রদীপ পাইনকে হেফাজতে নেয় তারা।

প্রদীপ পাইন উপজেলার ঢাকুরিয়া প্রতাপকাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দাদা জানান, প্রদীপ বাইনের কোচিং সেন্টারে পড়তে যেত ওই শিক্ষার্থী। রোজায় বিদ্যালয় বন্ধের মধ্যে একদিন বিকেলে একা পেয়ে কোচিং সেন্টারের কক্ষের মধ্যে ছাত্রীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন প্রদীপ। কোচিং থেকে বাড়ি ফিরে ওই ছাত্রী তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে তারা লিখিত অভিযোগ চান। লিখিত দেওয়ার পর ঘটনার তদন্ত হয়। তদন্তে সত্যতা পেয়ে শিক্ষক প্রদীপকে এক মাসের জন্য বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ছাত্রীর অভিভাবকরা জানান, প্রদীপের বিরুদ্ধে এর আগেও এমন অনেক অভিযোগ উঠেছে। তখন টাকা ছিটিয়ে তিনি পার পেয়ে গেছেন। এবার টাকা ছিটাতে যেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন প্রদীপ।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রমজান আলী বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের ৩ জনকে ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করার পর গত বৃহস্পতিবার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বাবলু কুমার সিংহ শিক্ষক প্রদীপ পাইনকে এক মাসের জন্য সাময়িক বহিষ্কার করেন। একই সাথে ওই শিক্ষকের ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। আজ থেকে শিক্ষক প্রদীপের শাস্তি কার্যকর হয়।

এদিকে শনিবার সকাল থেকে শিক্ষকের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার ও কোচিং সেন্টার চালুর দাবিতে পরীক্ষা বর্জন করে বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করেছে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। আজ তাদের ইংরেজি ২য় পত্রের প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ছিলো। পরীক্ষা না দিয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের জানালার গ্লাস ভাঙচুরও করেছে।

প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষার্থী হৃদয় হোসেনসহ অন্যরা বলে, প্রদীপ স্যারের বিরুদ্ধে যা করা হচ্ছে এটা অন্যায়। আমরা এর প্রতিবাদে পরীক্ষা বর্জন করেছি। স্যারের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ, প্রদীপ বাইন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে নিজের পক্ষে নিয়েছেন। নিজে বাঁচতে তিনি ছাত্রদের দিয়ে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করিয়েছেন।

অভিযুক্ত প্রদীপ বাইন দাবি করেছেন, ওই ছাত্রী ভুল পথে যাচ্ছিলো। তাকে শাসন করতে যেয়ে আমি ফেঁসে গেছি।

ঢাকুরিয়া প্রতাপকাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর জব্বার বলেন, গত ২২ এপ্রিল সহকারী শিক্ষক প্রদীপ বাইনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়ে কমিটি তাকে এক মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করেছে। শনিবার থেকে এ আদেশ কার্যকর হয়। প্রদীপ বাইনের বহিষ্কারের খবর পেয়ে শনিবার সকালে পরীক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে বিক্ষোভ করে। তারা পরীক্ষা বর্জন করেছে। আমি পরীক্ষার্থীদের বুঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। পরে পরীক্ষা শুরুর সময় পার হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা বাতিল করে বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, আগে থেকে ঘটনার কিছু আমাকে জানানো হয়নি। শনিবার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করায় প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। আগামী পরীক্ষাগুলো যেন হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ কোনো শিক্ষককে সাময়িক বহিস্কার করতে পারেন। কিন্তু সময় উল্লেখ করে ১ মাসের জন্য বহিষ্কার করার কোনো সুযোগ নেই।

মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূর-ই আলম সিদ্দীকি জানান, এ ঘটনায় শিক্ষক প্রদীপের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর পিতা বাদি হয়ে বিকেলে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমাদের বাণী/২১/৫/২০২২/যসো

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.