বিত্তবান সরকারি কর্মচারী পেলেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

রংপুরঃ জেলার মিঠাপুকুরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে অসহায় ও অসচ্ছলদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন সরকারি সচ্ছল এক কর্মচারী। বিত্তবান ওই সরকারি কর্মচারী আশ্রয়ণের সেই ঘরের পিছনেই ছাদঢালাই করা বাড়ি নির্মাণের কাজ করছেন। ইতোমধ্যে নির্মাণাধীন বাড়ির পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা ব্যয় করে নতুন আরেকটি বাড়ি নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি কর্মচারী হওয়ায় তথ্য গোপন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়েছেন ওই কর্মচারী।

অভিযুক্ত কর্মচারীর নাম রমজান আলী। তিনি উপজেলার পায়রাবন্দ ডাক বাংলোয় নিরাপত্তা প্রহরী পদে কর্মরত।

জানা গেছে, রমজান আলী ডাকবাংলো থেকে একটি সরকারি কোয়ার্টার বরাদ্দ পেয়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানেই থাকেন। এছাড়াও পায়রাবন্দ বাজারে সুরুজ সু-স্টোর নামে তার দুটি জুতার দোকান রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের খোর্দ্দ-মুরাদপুর গ্রামের রাস্তার পাশেই রমজান আলীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। তার পাশেই চলছে আরেকটি নতুন বিল্ডিং নির্মাণের কাজ। আশ্রয়ণের যে ঘরটি রয়েছে তার কয়েকটি পিলার এবং পিছনের কিছু অংশ ভেঙে নতুন বিল্ডিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

এছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরটির উপরে সম্পূর্ণ রঙিন টিন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে সাধারণ টিন। কারণ প্রকল্পের অন্যসব ঘর ৪০০ বর্গফুট আয়তনের হলেও রমজান আলীর ঘরটি আয়তনে ভিন্ন। সরকারি ঘরের ম্যাপের সঙ্গে মিল না থাকায় রঙিন টিনের সঙ্গে সাধারণ টিন লাগানো হয়েছে। নিজেকে ভূমিহীন দাবি করা রমজান আলীর প্রায় ৩ বিঘা কৃষিজমি ও নিজস্ব বাড়িভিটে রয়েছে প্রায় ১২ শতক।

স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল মিয়া বলেন, রমজান আলী সিকিউরিটি গার্ডের সরকারি চাকরি করেন। তার নিজের অনেক সম্পত্তি রয়েছে। তবুও সে কীভাবে সরকারি ঘর পায়। রমজান আলীর নিজের যে বসতভিটা আছে সেটার বর্তমান বাজার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকার বেশি হবে। তবুও এমন জমি পায়রাবন্দের আশেপাশে পাওয়া কষ্টসাধ্য হবে। এতকিছু থাকার পরেও সে কিভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

সহিদুল ইসলাম বলেন, রমজান আলীর প্রায় তিন বিঘার মতো চাষাবাদ করার জমি রয়েছে। এছাড়াও তার নিজের জন্মস্থান নিলফামারী জেলার ডিমলায় পৈত্রিক পাকাবাড়ি এবং কয়েক একর জমি রয়েছে। কিভাবে তিনি ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দের দ্বিগুণ বড় ঘর পেলেন। আসলে ক্ষমতা আর লোক থাকলে অনিয়মও নিয়মে পরিণত হয়।

এ বিষয়ে রমজান আলী বলেন, আমি পায়রাবন্দ ডাক বাংলোয় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিতে কর্মরত থাকার কারণে নীলফামারী থেকে পায়রাবন্দে স্থায়ী হয়েছি। পায়রাবন্দ ডাক বাংলোর কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে কোনও রকমে বসবাস করি। এখানে আমার তেমন কিছুই নেই। বড় কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ নিয়েছি। ঘরটি বড় এবং বসবাসের উপযোগী করতে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক স্যার তার পকেটের সাতাশ হাজার টাকা এবং আমার প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে আশ্রয়ণের ঘরটি বড় করে নির্মাণ করে দিয়েছেন।

রমজান আলী আরও বলেন, আশ্রয়ণের ঘরটি আমার নিজের নামে নয়। আমার স্ত্রী রনজিনার নামে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। আমাদের উভয়ের নামে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণের জায়গাটিতে ৯ শতক জমি রয়েছে। এর মধ্যে আমার স্ত্রী রনজিনার নামে ৫ শতক এবং আমার নামে ৪ শতক ভিটেমাটি আছে। তার মধ্যে আমার স্ত্রী রনজিনার পাঁচ শতাংশ জায়গার মধ্যে আশ্রয়ণের ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন ছেলের টাকা পয়সা হয়েছে, তার শ্বশুরের বিশাল অবস্থা। জায়গা সংকট হওয়ায় সে নতুন পাকাবাড়ি নির্মাণ করছে। আমার বাবার জমি নীলফামারীতে আছে, তবে সেসব নদীর চরে। এখানে যেসব চাষাবাদ করি সেগুলো আমার বন্ধক এবং বর্গা নেওয়া।

গৃহহীনদের দেওয়া ঘর ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে রমজান আলী বলেন, নতুন বাড়ির নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় গাড়ি লেগে ভেঙে গেছে। মেরামত করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে লাভ নেই। কেউ আমার কিছু করতে পারবে না। আমার উপরে লোক আছে।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোনও অভিযোগ দেয়নি। তবে গৃহহীনদের জন্য দেওয়া ঘরের নকশা পরিবর্তন কিংবা বৃত্তশালীদের পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। সেখানে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমাদের বাণী/২১/৫/২০২২/জিকবে

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.