ব্যাংকিং খাতে সরকারের নিট ঋণ ৩২ হাজার কোটি টাকা

ঢাকাঃ গতবছরের এপ্রিলের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত সরকারের ঋণ বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি কমাতে ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো চালু রাখতে ব্যাংক থেকে এই পরিমাণ ঋণ বাড়িয়েছে সরকার।

দেশের ঘাটতি বাজেট মেটাতে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে অর্থবছর শেষ হতে দুইমাস বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত সরকার ঋণ নিয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৪২.৫০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সরকার ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়েছে ২৫ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৭ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সরকারের ব্যাংকিং খাতে নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা।

গতবছরের এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল শেষে এই ঋণ এসে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬০৪ কোটি টাকায়। এই এক বছরে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ সংগ্রহ করেছে ৬৩ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গতবছরের এপ্রিলের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত সরকারের ঋণ বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি কমাতে ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো চালু রাখতে ব্যাংক থেকে এই পরিমাণ ঋণ বাড়িয়েছে সরকার।

মার্চ পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সরকার বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) ৪৫.৫৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। সামনের দিনগুলোতে এডিপি বাস্তবায়নের চাপ বাড়লে ব্যাংকিং খাতে ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটের ঘাটতি ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা দেশের জিডিপির ৬.২ শতাংশ। এই ঘাটতির বড় অংশ পূরণ হয় ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত একটি অর্থবছরের শেষদিকে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের বিল পরিশোধ করা হয়। এ কারণে শেষদিকেই ঋণ নেওয়ার চাপ বাড়ে।

ধারণা করছি, মে এবং জুন মাসে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ বাড়বে। এদিকে, ঋণের টার্গেট পূরণ না হলেও সংশোধিত বাজেটে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৮৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আদায় ১৫ শতাংশ বাড়লেও ব্যয় মেটাতে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে চাইছে সরকার। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোকে খুবই অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। সরকারের এক সমন্বিত সভায় তিনি ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ মূল বাজেট থেকে না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই সময় পর্যন্ত সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৩ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাদে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ঋণ নিয়েছে ৩৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত প্রথম ৯ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার ১৬ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ৩২ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্থাৎ, সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে লক্ষ্যমাত্রার ৫১ শতাংশ ঋণ নিতে পেরেছে।

সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, শেষ প্রান্তিকে এসে সরকারের ব্যয় বাড়বে। এর কারণ, ঋণ ব্যয় বাড়ছে এবং এডিপি বাস্তবায়নের চাপও আছে। সরকার যে তিনটি খাত থেকে ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি পূরণ করে, তার মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাতের ঋণটি সাধারণত প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

বর্তমানে মূল্যস্ফিতির চাপ থাকায় লোকজন সঞ্চয় কম করতে পারছে। তাই সুদের হার বেশি থাকা স্বত্ত্বেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে কম। এসব কারণে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ বাড়ানো হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদ কম দিতে হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সঞ্চয়পত্রের তুলনায় ব্যাংকে সুদের হার কম হওয়ায় সুদব্যয় কম হয়। তবে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিলে বাজারে তারল্য কমে, তাতে প্রাইভেট সেক্টরে ঋণের ওপর প্রভাব পড়ে।
তাই দেশের অর্থনীতিতে তারল্যের পরিস্থিতি কেমন, সেটি বিবেচনা করেই ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। সূত্র : টিবিএস

আমাদের বাণী/২১/৫/২০২২/বাবঋ

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.