এক বছরেই ভাঙ্গতে হলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

টাঙ্গাইলঃ  বছর না যেতেই ভেঙে ফেলা হলো টাঙ্গাইল ঘাটাইলের গৌরিশ্বর এলাকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের তিনটি ঘর। বড় বড় ফাটল, জীর্ণ দশা আর বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় কয়েকদিন আগে ভেঙে ফেলা হয় ঘরগুলো। পুনরায় ঘরগুলো নির্মাণের আশ্বাস দেয়া হয়েছে বাসিন্দাদের।

এদিকে ঝড় ও রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ভেঙে ফেলা ঘরের বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়াও ওই আশ্রয় কেন্দ্রের অন্যান্য ঘরগুলোতেও রয়েছে ফাটল। খসে পড়ছে পলেস্তারা। আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও নানা অনিয়মের কারণে ঘরগুলোর এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

সরজমিনে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ২৭৬টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে গৌরিশ্বর এলাকায় ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হয় ৪৪টি ঘর। কিছুদিন না যেতেই ঘরগুলোতে দেখা দেয় ফাটল। অভিযোগ ওঠে নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের। মাটির সমস্যার কথা বলে পাশ কাটিয়ে যায় প্রশাসন। পরবর্তীতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রয়ণ কেন্দ্র পরিদর্শন করে তা মেরামতের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই আবারও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় বড় বড় ফাটল। খসে পড়তে থাকে পলেস্তারা। সংবাদকর্মীদের কাছে দুর্দশার কথা তুলে ধরেন আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দারা। তখন টনক নড়ে প্রশাসনের। ছুটে যান প্রশাসনের কর্তারা। আশ্বাস দেয়া হয় ঘর পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারের। সংবাদকর্মীদের কাছে ঘরের বিষয় তুলে ধরায় নানা ধরনের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয় বাসিন্দাদের। পরে যে সমস্ত ঘরে বড় বড় ফাটল, জীর্ণ দশা আর বসবাসের অযোগ্য সে সব ঘর কয়েকদিন আগে ভেঙে ফেলা হয়েছে।

ঘর ভেঙে ফেলার পর কেউ আশ্রয় কেন্দ্রের পাশে কোন রকম ছাপরা তুলে বসবাস করছে আবার কেউ অন্যের আশ্রয় কেন্দ্রের ঘরের বারান্দায় বসবাস করছে। এছাড়াও ওই আশ্রয় কেন্দ্রের অন্যান্য ঘরগুলোতেও ফাটল থাকায় আতঙ্কে দিন কাটছে বাসিন্দাদের। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যাতো রয়েছেই।

আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা মাজেদা বেগমের বলেন, ‘মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিলাম। কয়দিন পরেই বড় বড় ফাটল দেখা দেয়। খসে খসে পড়ে পলেস্তারা। নতুন করে ঘর তৈরি করে দেয়া হবে বলে ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঠিকমতো লোক কাজ করতে আসে না। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে গাছের তলায় ছাপড়া তুলে রইছি। খুব কষ্ট হইতাছে।’

আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা শরিফা বেগম বলেন, ‘নতুন করে ঘর তৈরি করে দিবে বলে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাঙার পর ঠিকমতো কাজও করতে আসে না লোকজন। অন্যের ঘরের বারান্দা ও রান্না ঘরে রইছি। পোলাপান, গরু ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’

খুকি বেগম বলেন, ‘আমার ঘরে বড় বড় ফাটল। আতঙ্কে রয়েছি। অফিসার আইসা খুব রাগারাগি করলো। কাউকে যেন কিছু না বলি। ঝড়ের সময় দেয়াল ভেঙে পড়লে বাঁচমুনাতো।’

এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল বলেন, ‘মাটির কারণে কয়েকটি ঘরে সমস্যা থাকায় তা ভেঙে পুনর্নির্মাণ করা হবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.