কুষ্টিয়ায় এক ইউনিয়ন পরিষদ থেকেই দেড় কোটি টাকা লুট

বামে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাজাহান আলী ও ডানে ইউপি সচিব মহি উদ্দিন। ছবিঃ সংগৃহীত

কুষ্টিয়াঃ জেলার সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় দেড় কোটি টাকা লুট করেছে সংশ্লিষ্টরা। উপজেলার জিয়ারখী ইউনিয়নে প্রায় ১০ বছর নির্বাচন না হওয়ায় এ লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

জিয়ারখী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা ও তার সহযোগীরা এই মোটা অংকের অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে দোড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তারা। স্থানীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় নির্দিষ্ট হাট ইজারার ৪১ শতাংশ টাকার স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদ পাওয়ার কথা। এই নিয়মে ২০২০ ও ২০২২ সালে বালিয়াপাড়া পশু হাট ইজারা থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা পায় জিয়ারখী ইউনিয়ন পরিষদ।

এর মধ্যে ২০২০ সালে ৭১ লাখ টাকা পরের বছরে ৭৬ লাখ টাকার বেশি পায়। এ ছাড়া ২০১৯ সালেও ওই ইউনিয়ন পরিষদ মোটা অংকের টাকা বরাদ্দ পায়।

উপজেলা পরিষদ থেকে জানা গেছে, বালিয়াপাড়া পশু হাটের নির্ধারিত ৪১ শতাংশ ছাড়াও অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ অর্থ পায় ওই ইউনিয়ন পরিষদ। এই অর্থ দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)র মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। আর ৪১ শতাংশ টাকা দিয়ে নীতিমালা অনুযায়ী খরচ করতে পারেন পরিষদের চেয়ারম্যান। হাট বাজারের প্রাপ্ত অর্থের চেক চেয়ারম্যানের নামে ইস্যু করা হয়। প্রাপ্ত চেক তাদের নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা তোলার কথা। রূপালী ব্যাংক স্বস্তিপুর-ভাদালীয়া শাখায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব খোলা হয়েছে।

২০০৩ সালে সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মো. ইউসুব আলী। তিনি ২০১৯ সালে মৃত্যুবরণ করলে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান শাজাহান আলী। তিনি দায়িত্ব পালন করেন প্রায় তিন বছর। এ সময়ের মধ্যে বালিয়াপাড়া পশুহাট থেকে যে অর্থ পেয়েছেন তার মোটা অংশ ভাগবাটোয়ারা হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউপি সদস্য বলেন, পশু হাট থেকে আসা টাকা কোথায় কীভাবে খরচ হয়েছে তা তারা জানে না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাজাহান আলী, সচিব মহিউদ্দিন শেখ ও তার অনুগত একজন সদস্য, এক কর্মকর্তা ভাগ করে নিয়েছে। যে কারণেই কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাজাহান আলী ও সচিব মহি উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে প্রথমে দুই বার অর্থ বরাদ্দের কথা অস্বীকার করেন। তারা বলেন, একবার অর্থ বরাদ্দ পেয়েছি। তবে প্রমাণ দেখালে দুইবার অর্থ বরাদ্দের কথা স্বীকার করেন।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাজাহান আলীর দাবি- বেতনভাতা ছাড়াও ওই টাকা দিয়ে প্রকল্পের কাজ করেছেন। কাজের তালিকা চাইলে বলেন, পরে দিতে পারব। তিনি বলেন, কাজ করতে গেলে কিছু ভুল ত্রুটি হতে পারে। একমাস পরেই নির্বাচন, রিপোর্ট না করাই ভালো। করলে আমার ক্ষতি হবে। ইউপি সচিবের কাছে তথ্য চাইলে তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যান।

পরে তিনি বলেন, ২০২০ সালে বেতনভাতা ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। পরের বছরে ৫ লাখ টাকা বেতন ভাতা দেওয়া হয়। বাকি টাকা কোথায় খরচ হয়েছে, তা নথি না দেখে বলা যাচ্ছে না বলে জানান।

এলাকাবাসী জানায়, হাটে শুধু একবার বালু ভরাট করা হয়েছে, তারপর আর কিছুই হয়নি।

ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার জানান, শাজাহান আলী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক টাকা হাট থেকে এসেছে। তবে তাদের কোনও প্রকল্প দেওয়া হয়নি। তিনি নিজেদের লোক দিয়ে কাজ করেছেন।

জানা গেছে, আগের চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী মারা যাবার আগে ৩৮ লাখ টাকা রেখে গেছে। এই টাকারও হদিস নেই। তবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাজাহান আলী বলেন, তিনি ওইসব টাকা পাননি।

এসব বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাধন কুমার মণ্ডল বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.