ঢাকায় অবৈধ ইটভাটার অর্ধেকেরও বেশি সচল

ঢাকাঃ ঢাকা জেলায় ১১৬টি অবৈধ ইটভাটা ধ্বংসের লক্ষ্য নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে অভিযানে নামে পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা জেলা। সাড়ে পাঁচ মাস শেষে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৪টি ইটভাটায় অভিযান সম্পন্ন করে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিসংখ্যান-মতে, এখন পর্যন্ত ঢাকায় অর্ধেকের বেশি অবৈধ ইটভাটা চালু রয়েছে। ইটভাটায় অভিযানের পর কোনো রকম তদারক করছে না পরিবেশ অধিদপ্তর। ফলে বন্ধের পরও নতুন করে চালু হচ্ছে ইটভাটাগুলো। পরিবেশ দূষণ রোধে অধিদপ্তরের তদারকি জোরদার করার মাধ্যমে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।

ঢাকা ছাড়াও আশপাশের পাঁচ জেলায় ৩১৯টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। ইটভাটাগুলো বন্ধ করার জন্য পরিবেশ আইনবিদ অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে রিট করলে গত ১ মার্চ ঢাকা জেলার সব অবৈধ ইটভাটা ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দিলেও বেশির ভাগ ভাটাই দিব্যি চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় এখনো অবৈধ ৭২টি ইটভাটা সচল রয়েছে। পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে লোকালয় ও ফসলি জমির পাশে গড়ে উঠেছে এসব ভাটা। ভাটার কালো ধোঁয়ায় জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি ফসল ও গাছপালার ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বিবেচনায় এসব ভাটাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস করতে তত্পর পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রায় প্রতিদিনই অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সক্ষমতার অভাবে কার্যকারিতা হারাচ্ছে এসব অভিযান। সূত্রমতে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ইটভাটা ভেঙে দেয়া ও জরিমানা আদায়ের পরের দিনই আবার সেগুলো চালু হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাও। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের সক্ষমতায় মারাত্মক অভাব রয়েছে। ১০০টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান করতে অন্তত বছরখানেক সময় লেগে যায়। এ সময়ের মধ্যে যেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে সেখানের অবস্থা পর্যবেক্ষণের সুযোগ আর হয় না। ফলে ওইসব এলাকায় উচ্ছেদ-জরিমানার পর পরই ফের অবৈধভাবে চলতে থাকে ইটভাটাগুলো।

পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানের পরও কেরানীগঞ্জেও অবৈধ ইটভাটাগুলো চলছে। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জের ঘোষকান্দা, ব্রাহ্মণগাঁও, জাজিরা, রাজেন্দ্রপুর ও বাঘৈর এলাকায় সরেজমিনে দেখা গিয়েছে, অবৈধ ভাটায় ইট পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণ চলছে। পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আবাসিক এলাকা এমনকি ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে রাজেন্দ্রপুরের বাঘৈর এলাকায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উত্তর পাশে পাঁচটি ইটভাটা চলছে। একাধিকবার পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করলেও এখনো চলছে ভাটাগুলো। বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সাবেক মহাসচিব মো. আবু বকর বণিক বার্তাকে বলেন, কেরানীগঞ্জে বেশির ভাগ ভাটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়ার পরও অনেক ইটভাটা সচল রয়েছে।

ভাটায় অভিযান প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ফায়ার সার্ভিস, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার সমন্বয়ে আমাদের এ কাজ করতে হয়। তাই সবার সহযোগিতা না পেলে অভিযান পরিচালনা করাটা জটিল হয়ে পড়ে।

ভাটা বন্ধের পর চালু করা প্রসঙ্গে জহিরুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা ছাড়া পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আমরা তো ভেঙে আগুন নিভিয়ে দিয়ে আসি। এরপর তারা শুরু করলে, সে তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত আসলে কিছুই করার থাকে না। তাছাড়া যাদের সহযোগিতা করার কথা, অনেক সময় বারবার বলেও তাদের সহযোগিতা পাওয়া যায় না।

ইটভাটা বন্ধ ও বায়ুদূষণ রোধে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা সন্তোষজনক নয় বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি কে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সার্বিক সক্ষমতা সন্তোষজনক নয়। তাছাড়া কোথাও অভিযানের পর সেখানের পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে না পরিবেশ অধিদপ্তর। ফলে জরিমানা ও ভেঙে দেয়ার পরও ইটভাটাগুলো বন্ধ রাখা যাচ্ছে না।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.