
ঢাকাঃ ঢাকার ভেতরেই অসাধারণ সুন্দর সব স্থান আছে। যারা ঢাকার ভেতরেই বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের সন্ধান করেন, তারা চাইলেই একদিনে ঘুরে আসতে পারেন কেরানীগঞ্জের দর্শনীয় ৩টি স্থানে।
সেখানকার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান আপনার মন কাড়বে। নদী, নৌকা, কাশফুল, ঐতিহাসিক মসজিদ, বিশাল মাঠ, ইট ভাটাসহ খোলামেলা পরিবেশে গিয়ে কিছু সময় কাটাতে শহরবাসীরা ভিড় জমান সেখানে। তাই এক বিকেল কাটাতে বেড়িয়ে পড়ুন ঢাকার অদূরেই কেরানীগঞ্জে-

প্রথমেই ছুটতে পারেন কেরানীগঞ্জের সাউথ টাউন মসজিদে। চারপাশে কাশফুল ঘেরা এক অসাধারণ স্থাপনা। সাউথ টাউন আবাসিক প্রকল্পে সাউথ টাউন জামে মসজিদ অবস্থিত। নজরকরা স্থাপত্যশৈলী ও বৈচিত্র্যময় নির্মাণ মসজিদকে দিয়েছে বাড়তি স্বাতন্ত্র্য। মসজিদ মূলত প্রার্থনার স্থান হলেও নির্মাণশৈলীর নান্দ্যনিকতায় সৌন্দর্য প্রেমী মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে সাউথ টাউন জামে মসজিদ। তাই সহজেই দেশজুড়ে মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে এই মসজিদের বার্তা। ফলে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী মসজিদটি দেখতে ও নামাজ আদায় করতে আসেন।
প্রায় দুই বছর সময় ধরে নির্মিত সাউথ টাউন মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে ৩টি প্রধান ফটক ও দুই পাশে একটি করে মোট ৫টি প্রবেশ পথ রয়েছে। আর মসজিদের অভ্যন্তরে আলোবাতাস প্রবেশের জন্য আছে অসংখ্য জানালা। আধ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদটিতে একত্রে প্রায় ৬০০ মুসল্লি নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা আছে৷
সাউথ টাউনে কীভাবে যাবেন?
ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে উঠতে হবে। এরপর রাজেন্দ্রপুর যেতে হবে। ঢাকা কেন্দ্রী কারাগারের একটু পরে হাতের ডান দিকেই সাউথ টাউন প্রকল্প। এই আবাসন প্রকল্পের প্রধান ফটক থেকে ৮-১০ মিনিট হেঁটে ভেতরে ঢুকতেই দূর থেকে চোখে পড়বে এই মসজিদ।

দেড় শত বছরের বেশি সময় ধরে কালের সাক্ষী হয়ে আছে ঢাকার কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ। ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি পেয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর স্বীকৃতি।
১৮৬৮ সালে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেন দারোগা আমিন উদ্দীন আহম্মদ। তাই এর পরিচিত ছিলো ‘দারোগা মসজিদ নামেও’। বংশ পরম্পরায় মসজিদটির নির্মাণ ও সংস্কারকাজে নিয়োজিত ছিলেন খিদিরবক্স ও কাদের বক্স নামে দুই ভাই এবং মইজ উদ্দিনের পরিবার। আর কাদের বক্সের দৌহিত্র সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হামিদুর রহমান ১৯৬৮ সালে মিনারসহ মসজিদটির বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেন। পরিবারের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে মসজিদটির ব্যাপক সংস্কার করেন অধ্যাপক হামিদুর রহমানের ছেলে বর্তমান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
তখন জনসংখ্যার বিবেচনায় মসজিদটি ছোট আকারে নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদটির মাঝখানে রয়েছে দু’টি গম্ভুজ, চারপাশে রয়েছে তিনস্তর বিশিষ্ট ৮টি মিনার। আর এর শীর্ষে রয়েছে ছোট গম্বুজ। এর বাইরেও বাকি ১২ খুঁটির উপরিভাগে রয়েছে কারুকাজ।
১৫০ বছরের পুরনো আদল ধরে রেখে নবাবি আমলের ঐতিহ্য বজায় রেখে সংস্কারকাজ করা হয়েছে। মসজিদের ভেতরে রয়েছে দুটি মেহরাব। স্থানীয়দের কাছে এটি অত্যন্ত পবিত্র একটি স্থান। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে, এমনকি দেশ–বিদেশ থেকেও পর্যটকেরা কেরানীগঞ্জের মসজিদটি দেখতে আসেন। আধুনিক স্থাপনার এই মসজিদ পর্যটকের মনোযোগ কাড়ছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অনন্য এই স্থাপনা নিয়ে একাধিকবার ফিচার হয়েছে।
দোলেশ্বর হানিফিয়া জামে মসজিদ যাওয়ার উপায়
ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ ধরে সহজেই যেতে পারবেন দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ কম্পলেক্সটি দেখতে। পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে নেমে ২০ টাকা অটো ভাড়ায় চলে আসতে পারেন (দোলেশ্বর) মসজিদে।

সারিঘাট হচ্ছে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রোজেক্টের পেছনের একটি স্থান। যা আইন্তা ও আড়াকুল গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি খালের অংশবিশেষ। খালের পাশ দিয়ে সারি ধরে করই গাছ আছে। এ কারণেই জায়গাটি সারিঘাট নামে বেশি পরিচিত।
খালের নব্যতা বাড়াতে ড্রেজিং করা হয়েছিল ও রিভার প্রজেক্টের বালু আড়াকুল গ্রামের দিকে ফেলার কারণে এখানে শরৎকালের দেখা মেলে বিস্তীর্ণ কাশবন। খাল-বিল আর গাছপালার কারণে সেখানকার পরিবেশ অনেকটাই গ্রামীণ। যা একটু হলেও মনে প্রশান্তি এনে দিবে আপনাকে। সেখানে গেলে খালের ধারে দেখা মিলবে প্রায় কিলোমিটার পর্যন্ত গাছের সারি। একইসঙ্গে কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকানও পাবেন। কাশবন ছাড়াও সারিঘাটে পাবেন, কায়াকিং ও নৌ ভ্রমণের সুযোগ।
সারিঘাটের শুরুতেই পড়বে কায়াকিং, ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা। বিকেল বেলা ভিড় থাকে, তাই কায়াকিং করতে চাইলে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে যাবেন। এছাড়াও নৌকা ভাড়া করলে ঘণ্টা প্রতি ১০০ টাকা গুনতে হবে। তবে আগেই ভালোভাবে দামাদামি করে নেবেন।
সারিঘাট কিভাবে যাবেন?
কেরানীগঞ্জের সারিঘাট যাওয়ার জন্য ঢাকার যে কোন জায়গা প্রথমে যাত্রাবাড়ী আসতে হবে। সেখান থেকে জুরাইন রেল গেইট। বাস বা লেগুনাতে ভাড়া ৮ টা। জুরাইন রেল গেইট থেকে পোস্তগলা ব্রিজ পার হতে হবে। পোস্তাগলা ব্রিজ পার হলেই সারিঘাট যাওয়ার অটোরিক্সা বা সিএনজি পেয়ে যাবেন। লোকাল সিএনজিতে ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা।
লোকাল সিএনজির ঝামেলায় যেতে না চাইলে জুরাইন রেল গেইট থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১২০ টাকা। একসাথে ৪/৫ জন গেলে জুরাইন বা পোস্তগোলা থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে যাওয়াই ভালো। ফেরার পথেও ওখান থেকে সিএনজি পাওয়া যাবে।
Leave a Reply